বাগানে অকাল বসন্ত, ত্রিমুকুট জয়ের দোরগোড়ায় হাবাস বাহিনী !

গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে আজ শহরের সমস্ত রাস্তা মিশে গিয়েছিল যুবভারতীতে, ফাইনালে ওঠার হাতছানি কোনো সবুজ মেরুন সমর্থক এড়িয়ে যেতে পারেননি। সরকারি হিসেব বলছে দর্শক সংখ্যা ৬২,০০৭। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি বিচার করলে সংখ্যা আরও কয়েক হাজার বেড়ে যাবে, পুলিশ ভিড় সামাল দিতে না পেরে টিকিট পাঞ্চ না করেই দর্শকদের ঢুকতে দিতে বাধ্য হয়, তখন ম্যাচ শুরু হতে আর ৫ মিনিট বাকি। সম্প্রতি শুধুমাত্র একটি দলের ম্যাচ দেখার জন্য সারা দেশে এতো দর্শক সমাগম কখনো হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। আর এখানেই মোহনবাগান নামের জাদু।

গত ১৫ই এপ্রিল সরকারি হিসেবে ৬১,৭৭৭ আর আজকে বাষট্টি হাজারের জনজোয়ার – প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট।

এবার আসি খেলার কথায়। চিরাচরিত ৩-৫-২ ছকে খেলতে নেমে মোহনবাগান প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছন্দে খেলতে শুরু করে। প্রথম মিনিটেই প্রায় গোল করে ফেলেছিল মোহনবাগান, আর তার পর থেকে ক্রমাগত আক্রমণের ঝড় শুরু হয়। তার ফলস্বরূপ দিমিত্রির শট অমরিন্দর প্রতিহত করতেই ফিরতি বলে গোল করে যান কামিংস। বিরতির আগেই হয়তো তিন গোলে এগিয়ে যেতে পারতো মোহনবাগান। এই সময়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে শুভাশিস কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন রয় কৃষ্ণা।

কিন্তু ডিফেন্সে আজ অনবদ্য খেলেছেন হেক্টর ইউস্তে, একবার গোল লাইন সেভ করে দলকে নিশ্চিত পতনের হাত থেকে রক্ষা করেন। ম্যাচ যখন প্রায় শেষের দিকে, মানসিক ভাবে অনেক দর্শক প্রস্তুতি নিচ্ছেন খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়াতে চলেছে সেই সময়ে বাঁ দিক থেকে মনভিরের পাস ধরে বক্সের মধ্যে সাহাল বল ঠেলে দিলে অমরিন্দর সেভ করেন, কিন্তু সেই বল আবার সাহালের মাথায় লেগে গোলে ঢুকে যায়। ম্যাচের বয়স তখন ৯৩ মিনিট, যুবভারতী তখন আক্ষরিক অর্থেই মোহনভারতী হয়ে উঠেছিল।

আজ দুই ধুরন্ধর কোচের লড়াইতে জিতে গেলেন হাবাস, আসলে কার্লোস দেলগাডোর না থাকার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। দীপক টাংরি কে ডিফেন্সিভ স্ক্রীণ হিসেবে খেলিয়ে কাউকো ও থাপার উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন মাঝ মাঠে রাজত্ব করার, আর সেটাই করলেন বাগানের দুই যোদ্ধা। ম্যাচ শুরুর আগে বাগানের বিদেশী খেলোয়াড়দের যে ঐতিহ্য, পরম্পরা নিয়ে টিফো প্রদর্শন হয় তার পূর্ণ সম্মান রাখলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস।

অনেক বছর পর বাগানে এখন ত্রিমুকুট জয়ের হাতছানি, পরপর দুবার আইএসএল কাপ জেতার সুযোগ। আগামী ৪ই মে, শনিবার আবার একটা ফাইনাল খেলতে নামবে মোহনবাগান এই যুবভারতীতে, ততদিন আরও একটা স্বপ্নের বুনন বুনতে থাকুক আপামর মোহনবাগান সমর্থক।

Loading

loader