ভাঙাচোরা হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে স্বস্তির জয় মোহনবাগানের!

ম্যাচ প্রিভিউতে লিখেছিলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি খেয়ে মোহন জনতা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারবে কিনা! এই ম্যাচটা যে মোহনবাগান জিতবে সেই নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না কিন্তু মনের একটা দোলাচল ছিল কতো গোলে জিতবে তাই নিয়ে। শেষমেশ পরপর তিন ম্যাচ হারের পর ডার্বি তে ড্র করে জয়ের সরণি তে ফিরল পাল তোলা নৌকা। সেই চেনা চ্যান্ট মুখরিত চেনা গ্যালারি, ড্রামের তালে তালে সবুজ মেরুন স্কার্ফ নিয়ে উদ্বেলিত হাজার হাজার তরুণ তরুণী – মোহনবাগান ফিরল রাজার মতো।

কিন্তু রাজার মতো ফেরা হলেও বিপক্ষের সম্পূর্ণ স্বদেশী ব্রিগেড লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখেনি বোস অ্যান্ড কোম্পানির জন্যে! অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত হায়দ্রাবাদের ছেলেরা যথেষ্ট লড়াই করেছে তাদের সীমিত শক্তি নিয়ে।

বিখ্যাত ক্রিকেট সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নেভিল কার্ডাসের কথা অনুযায়ী কাল ম্যাচ শেষের স্কোরবোর্ড কি সত্যি খেলার প্রতিবিম্ব ছিল? মোহনবাগান ২-০ গোলে জিতলেও স্কোরবোর্ডে কম করে ৬ গোল এবং কামিংসের হ্যাট্রিক হওয়া উচিত ছিল গতকাল। কেনো হয়নি তার চুলচেরা বিশ্লেষণ হাবাস নিশ্চয়ই তাঁর নোটবুকে করেছেন, কিন্তু গ্যালারি থেকে যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি আমাদের কখনো কখনো হা-হুতাশের কারণ হয়ে উঠেছে তা যদি একটু দেখা যায় –

১. একজন সত্যিকারের বক্স স্ট্রাইকারের অভাব, কামিংস গোল করলেও শুধুমাত্র তার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার জন্যে গোলে বল রাখতে পারেনি।

২. উইঙ্গার হিসেবে মনভীর দিন দিন উন্নতি করলেও সঠিক সময়ে বল ছাড়ার সিদ্ধান্তহীনতা পরের ম্যাচে দল কে ভোগাতে পারে।

৩. প্রথমার্ধে ডানদিকে উইং ধরে খেলা সেভাবে না হওয়ার কারণ অবশ্যই গ্লান মার্টিন্স, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার যদি হঠাৎ করে রাইট ব্যাকে চলে যায় তাহলে যা হওয়ার তা হয়েছে।

তবে মোহনবাগানের বেশ কিছু ইতিবাচক দিক কাল আমাদের চোখে পড়েছে –

১. অবশ্যই কামিংসের গোলে ফেরা এবং মাঠ জুড়ে খেলার চেষ্টা। একজন স্ট্রাইকার গোলের গন্ধ পেয়ে গেলে তার ছন্দে ফিরতে শুরু করে কিনা সেটাই দেখার।

২. অনিরুদ্ধ থাপার সবুজ মেরুন জার্সিতে প্রথম গোল তার নাছোড়বান্দা মানসিকতার পরিচায়ক। নিজের বক্স থেকে বিপক্ষের বক্স পর্যন্ত অবাধ বিচরণ তার পুরোনো ছন্দে ফিরতে সাহায্য করেছে।

৩. আমনদীপ, দীপেন্দু এবং অভিষেক – এই তিন তরুণ তুর্কি আগামী দিনে বাগানের অন্যতম আকর্ষণীয় ফুল হয়ে ফুটতে চলেছে। সঠিক মালির পরিচর্যা তারা যে পাচ্ছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

৪. B2 গ্যালারির দিকে গোল পোস্টের পিছনে যখন তিনি ওয়ার্ম আপ করছিলেন তখন তাঁকে নিয়ে বেসক্যাম্প জোন থেকে যে শব্দব্রহ্মের শুরু সেটা ছড়িয়ে পড়ে যখন তিনি প্রায় দেড় বছর পর আবার মাঠে নামলেন। নেমেই প্রথম টাচে যদি শট টা গোলে রাখতে পারতেন তাহলে এখনই লিখে দেওয়া যেতো – “তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন”। মাঠে নেমেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তার চেনা জাত, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এসেছেন তাঁর ছেড়ে যাওয়া রাজ্যপাট।

তিনি – জনি কাউকো

হঠাৎ করে শীতের প্রত্যাবর্তনের মতো মোহন জনতার জয়ের খিদে বেড়ে যাওয়ার সাক্ষী থেকে বাড়ি ফেরার পথে পা বাড়িয়ে একটা কথাই মনে হলো – ভ্যালেন্টাইন্স ডের সন্ধ্যা তে আরব সাগরের তীরে পালতোলা নৌকার হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা হয়ে উঠুক হাবাস বাহিনী।

প্রথম একাদশ:

Ratings:

Vishal Kaith – 8

গোলকিপার আত্মবিশ্বাসী হলে ডিফেন্ডারদের কাজ সহজ হয়ে যায়, সঠিক অনুমান, গ্রিপিং, এরিয়াল বলে সঠিক সময়ে পৌঁছে যাওয়া এবং রিফ্লেক্স প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে।

Héctor Yuste – 7.5

বাড়ির বড়ছেলের মতো নিঃশব্দে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ফুটবল বোধ ও অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে ডিফেন্স কে নেতৃত্ব দেওয়া যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে।

Subhasish Bose – 7

লেফ্ট ব্যাক হলেও কালকে দলের প্রয়োজনে সেন্ট্রাল ব্যাক হিসেবে শুরু করেছিলো, পরে আবার পছন্দের জায়গায় ফিরে গেলে চির পরিচিত ওভারল্যাপ, কভারিং, ট্যাকল সবকিছুই ঠিকঠাক হয়েছে.. এক কথায় পরিষ্কার ফুটবল খেলা উপহার দিয়েছে।

Amandeep – 4

সাইডব্যাকে ভালো খেলতে শুরু করলেও চোট পেয়ে উঠে যাওয়ার জন্য বেশি সময় পায়নি নতুন পজিশনে নিজেকে চেনানোর।

Glan Martins – 4

বিশেষ কিছু বলার নেই, যদিও কাল রাইট ব্যাক হিসেবে শুরু করেছিলো যা ওর নিজের জায়গা নয়, তাও বলবো এবার ওকে নিয়ে সত্যি ভাববার সময় এসে গেছে।

Abhishek Suryavanshi – 7.5

এই মরসুমে সিনিয়র দলে বেশি সুযোগ পায়নি কিন্তু যে টুকু খেলতে পারছে সেখানে কোচের বিশ্বাসের সদ্ব্যবহার করছে। সঠিক সময়ে ট্যাকল এবং বল স্ন্যাচিং করার ক্ষেত্রে আরও একটু উন্নত হলে মোহনবাগানের এক সম্পদ হয়ে উঠবে এই মারাঠি তনয়।

Anirudh Thapa – 8

একরোখা মানসিকতার জন্যে কাল সবুজ মেরুন জার্সি গায়ে প্রথম গোল পেয়েছে। বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Sahal Abdul Samad – 6

কাল কোথাও যেনো ছন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছিল, আক্রমণে ধার বজায় রাখলেও বিপক্ষের বক্সের সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছিল মাঝে মাঝে।

Manvir Singh – 8

উইং ধরে দৌড় এবং তার সাথে বল কন্ট্রোল, ড্রিবলিং চোখের আরাম দিয়েছে। শুধু বক্সে ঢুকে সঠিক সময়ে পাস বা মাইনাস করার দিকে একটু নজর দিতে হবে।

Dimitri Petratos – 8.5

আর্ম ব্যান্ড না থাকলেও মাঠের মধ্যে সত্যিকারের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ থাকলে তাহলে সে DP9। এক কথায় বলা যায় অর্কেস্ট্রার ব্যান্ডমাস্টার।

Jason Cummings – 7

দেড় মাস পর গোল করেছে, কাল চেষ্টা করেছে বেশ কিছু, কিন্তু সেই একই তথৈবচ অবস্থা। ডান পা বলে কিছু নেই, আর হেড দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই।

Kiyan Nassiri – 6.5

স্পিড খুব ভালো, বিপক্ষে ত্রাস সঞ্চার করার ক্ষমতা রাখে। এবার শারীরিক সক্ষমতা ও physique নিয়ে সময় দিতে হবে।

Joni Kauko – 7.5

প্রায় দুই বছর পর প্রতিযোগিতা মূলক ম্যাচে নেমে জাত চিনিয়ে দিয়েছে। মোহন জনতা মিডফিল্ডে এরকম প্লেয়ার খুঁজছিল এতদিন।

Dippendu Biswas – 7

Highly impressive, মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা আছে। এবার physique নিয়ে ভাবতে হবে, তাহলে অনেক দূর যাবে।

Lalrinliana Hnamte – 6.5

সুযোগ পেলে জুনিয়র প্লেয়াররাও খেলতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ। impressive performance।

Suhail Bhat – 5

মনভীর ঠিক সময়ে মাইনাস করলে ISL এ প্রথম গোল টা পেয়ে যেতো, আরও সুযোগ পাবে আশা করি। সত্যিকারের ফরওয়ার্ড হওয়ার সব গুণ আছে।

Official Attendance: 30,899

Loading

loader