‘স্টেনগান’-এর প্রত্যাবর্তনের মাঝেই জামশেদপুরের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের সহজ জয়!

ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথ ধরেছে দর্শকরা, কিন্তু তখনো চোখে ঘোর লেগে আছে – মনে হচ্ছে সবুজ ক্যানভাসে কয়েকজন শিল্পী নিজের ইচ্ছে মতো তুলি বুলিয়ে গেছে। বিশ্বাস করতে দ্বিধা নেই যে গতকাল মোহনবাগান এখনো পর্যন্ত এই মরসুমে অন্যতম সেরা খেলা উপহার দিয়েছে।


ওড়িশা ম্যাচের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে কোচ হাবাস নিজের আস্তিনের সেরা তাস গুলো বের করতেই যেনো মোহনবাগান চেনা ছন্দে ফেরত এলো। দলের প্রথম একাদশের দিকে নজর রাখতেই দেখা গেলো, অনিরুদ্ধ থাপা রিজার্ভ বেঞ্চে কিন্তু শুরু থেকেই একসাথে দুইজন সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডিও – টাংরি ও অভিষেক। আর জনি কাউকো অ্যাটাকিং মিডিও; দুটো উইঙ্গার মনভির আর লিস্টন। আর এতেই সবুজ মেরুন ঝড় শুরু থেকেই আছড়ে পড়তে থাকে জামশেদপুরের বক্সে – ফলস্বরূপ প্রথম ছয় মিনিটের মধ্যেই মনভির মাইনাস থেকে দিমিত্রির পা ঘুরে বল জালে জড়িয়ে যায়। এরপর জামশেদপুর বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি করলেও বিশাল কায়েথের বিশ্বস্ত হাত কে পরাস্ত করতে পারেনি।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে বাগানের সুবাস যেনো আরও বেড়ে যায়, একের পর এক আক্রমণে রেড মাইনার্সদের লোহার খাঁচা যেনো ভেঙে পড়তে থাকে। কামিংসের অসাধারণ প্লেসিং জালে আছড়ে পড়তে দেখে হয়তো সাদিকু ভেবেছিলো ‘আমিও প্রায়শ্চিত্ত করে নিই’। ৮০ মিনিটে সাদিকুর বাঁ পায়ের শট খালিদ জামিলের সব আশায় জল ঢেলে দেয়।

কথায় আছে, বাগানের ফুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় সঠিক মালির পরিচর্যা পেলে। আর তার জ্বলন্ত উদাহরণ জেসন কামিংস – যতো দিন যাচ্ছে নিজেকে মেলে ধরার একটা প্রচেষ্টা দেখা দিচ্ছে। কোচ হাবাস একদম সঠিক ভাবে মোহনবাগানের প্রিয় ‘জোকার’ কে ব্যবহার করছেন, তাই এখনো পর্যন্ত আইএসএলে ৭ টা গোল হয়ে গেছে তাঁর।

কোচ হিসেবে হাবাস জানেন কোন খেলোয়াড় কে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। আর তার সেই বিশ্বাসের সঠিক প্রতিদান দিয়ে চলেছে মারাঠা তনয় অভিষেক সূর্যবংশী। এতো কম বয়সে এই রকম খেলোয়াড়ি পরিপক্বতার পরিচয় ইদানিং কালে ভারতীয় ফুটবলে খুব কম দেখেছি। সময়োচিত ট্যাকেল এবং বল ধরে খেলার মানসিকতা এরকম বজায় রাখতে পারলে খুব অচিরেই অভিষেকের গায়ে ভারতের সিনিয়র দলের জার্সি দেখতে চলেছি আমরা।

ছোটবেলায় কলকাতা দূরদর্শনের দৌলতে মোহনবাগান কে নিয়ে একটা তথ্য চিত্র দেখেছিলাম – ‘আবহমান মোহনবাগান’, কিভাবে মোহনবাগান ভারতীয় ফুটবলে একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি করে এসেছে। আর কাল যুবভারতীতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখলাম আমরা – যে স্টেন গান শিলিগুড়ির মাঠে সনি নর্ডি চালিয়ে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করেছিলেন সেই ফেলে আসা বন্দুক চালিয়ে ‘দিমি-গড’ বুঝিয়ে দিলেন তিনি পূর্ব গৌরবের ধারক ও বাহক হতে এসেছেন।

Loading

loader