সেনাপতি কাউকোর কাঁধে ভর করে নর্থইস্ট বিজয় মোহনবাগানের!

আপনি ছোটো বেলায় ‘ঠাকুমার ঝুলি’ পড়েছিলেন? মনে আছে জীয়ন কাঠির গল্প টা? যেখানে কোনো এক রাজকুমার এসে ঘুমন্ত রাজকন্যাকে সেই কাঠি দিয়ে স্পর্শ করে জাগিয়ে তুলেছিলো – মনে পরছে কিছু? নাহলে ছেড়ে দিন, স্মৃতির সঙ্গে ব্যর্থ লড়াই করতে হবে না আর। মোহনবাগানে ফিরে আসুন, আর এক রূপকথার গল্প শোনাই।

বেশিদিন আগের কথা নয়, শহরে শীতের কামড় সেভাবে না এলেও বাগানে তখন হঠাৎ করেই পাতা ঝরার দিন চলে এলো। এএফসি কাপ থেকে বিদায়, আইএসএলে পরপর তিন ম্যাচ হেরে কোচ পরিবর্তন, তারপর সুপার কাপে বিপর্যয় – এমতাবস্থায় দায়িত্ব নিলেন তিনি এবং পরপর চার ম্যাচে অপরাজিত। কোথায় পেলেন তার পরশপাথর বা জীয়নকাঠি? আজকের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় যিনি, সেই জনি কাউকো মোহনবাগানের পরশ পাথর।

আজকের দিন আক্ষরিক অর্থেই জনি কাউকোর প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ – তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন।

প্রথমার্ধের শুরুতেই যে ধাক্কা মোহনবাগান খেয়েছিল সেটা সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় হাবাসের ছাত্রদের। তিব্যাক সিস্টেমে খেলার জন্য মোহনবাগানের ডান দিকে যে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হচ্ছিলো সেই জায়গা কে কাজে লাগিয়ে পেনাল্টি থেকে গোল করে যান নর্থ ইস্টের অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড টনি জুরিচ। এরপরে বেশ কিছু আক্রমণ তুলে আনলেও দীপেন্দু ও হেক্টরের তৎপরতায় সেগুলো প্রতিহত হয়। সত্যি কথা বলতে গেলে ম্যাচের প্রথম ত্রিশ মিনিটে জুরিচ, জিতিন আরও গোল করলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।

কিন্তু তারপরে শুরু হয় মোহনবাগানের স্ক্যান্ডানেভিয়ান ওয়ারিওর জনি কাউকোর ম্যাজিক। মাঝ মাঠে শুধু নেতৃত্ব দিলেন তাই নয়, তিনটে গোলের ঠিকানা লেখা পাসের ছবি দিলেন যুবভারতীর সবুজ ক্যানভাসে। যেমন পজিশন নেওয়া, তেমনি বল কন্ট্রোল, পাশ দেওয়ার ক্ষমতা তেমনি গোল করার প্রয়াস – একেবারে complete প্যাকেজ। মনে করতে পারছি না শেষ কবে ভারতীয় ফুটবলের কোনো একটা ম্যাচে তিনটি অ্যাসিস্ট ও বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল খেলে কেউ প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার সাথে যুক্ত হয়েছেন মোহন জনতার নয়নের মণি – ‘দিমি গড’ পেত্রাতোস, যার মধ্যে রয়েছে কোনো এক মুকুট হীন রাজার স্বত্বা যিনি শুধু রাজ্য স্থাপন করতে আসেন নি, সকলকে তার বশ্যতা স্বীকার করিয়ে ছাড়বেন। একজন উথড্রয়াল ফরওয়ার্ড হয়েও কিভাবে দলের প্রয়োজনে সারা মাঠ জুড়ে খেলতে হয় তার প্রকৃত উদাহরণ দিমিত্রি পেত্রাতোস।

হাবাসের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো ভারতীয় জুনিয়র ছেলেদের কে নিয়ে ম্যাচ বের করার সাহসিকতা, হলফ করে বলা যায় এই মানসিকতা অনেক বিদেশী কোচের নেই। এইভাবেই তিনি দলের রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি করে রাখছেন। মোহনবাগানের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ স্বস্তির খবর আনোয়ার আলির ফিরে আসা, যা পরবর্তী ম্যাচ গুলোতে অক্সিজেন জোগাবে ডিফেন্স কে।

লীগ টেবিলের দুই নম্বরে উঠে এসে শীল্ড জয়ের প্রবল দাবিদার হয়ে উঠেছে মেরিনার্সরা, এখন দেখার আগামী সপ্তাহে ওড়িশার বিজয়রথের চাকা মাটিতে বসিয়ে দিতে পারে কিনা হাবাসের সেনাবাহিনী।

Ratings:

Vishal Kaith [7.5]

Héctor Yuste [7]

Subhasish Bose [7.5]

Dippendu Biswas [6]

Abhishek Suryavanshi [7]

Joni Kauko [9]

Sahal Abdul Samad [8]

Manvir Singh [7]

Liston Colaco [8]

Jason Cummings [7.5]

Dimitri Petratos [8.5]

Anwar Ali [6.5]

Asish Rai [6]

Deepak Tangri [6.5]

Armando Sadiku [6]

Lalrinliana Hnamte [6.5]

Attendance: 29,888

Loading

loader